ছোট বেলায় ভোরের কুয়াশা দিয়ে গাড়ির কাঁচে নক্সা আঁকা, কিংবা ফুঁ দিয়ে সিগারেটের ধোঁওয়া বানানোর দিনগুলোই বোধ হয় ভালো ছিল। সুয়েটারের ভিতর দুই হাত গুজে “ আম্মু আমার হাত নাই” বলে রান্নাঘরে মা কে চমকে দেওয়ার বয়স বোধ হয় এখন আর নাই।
‘Clash Of Clans’ আর ‘Candy Crush Saga’ -এর যুগে শহুরে কেউ আর মার্বেল কিংবা লাটিম খেলে রাজ্য জয় করে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরে না। ‘কানা মাছি ভোঁ ভোঁ যাকে পাবি তাকে ছোঁ’ কিংবা ‘এলাটীং বেলাটীং থারটি টু’ যে একটা খেলার নাম- এইটা এই যুগের কাউকে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে বিশ্বাস করতে বললেও বিশ্বাস করবে কি না সন্দেহ! আহা, স্কুল ছুটির পর বরফ পানি খেলার দিনগুলোই বোধ হয় ভালো ছিলো। সুর করে ‘কুমির তোর জলে নেমেছি’ ছড়া কেটে সারা উঠান জুড়ে তাফালিং করার দিনগুলো এখন আর নাই।।
ড্রয়িং রুমের সোফায় ঘুমানোর ভান করে পড়ে থাকলেও এখন কেউ আর কোলে করে বিছানায় রেখে আসে না। প্রবল জ্বরে মাথায় জলপট্টি দিয়ে শোনা হয় না এক দেশে এক রাজার গল্প। আপেলের বিচি গিলে খেলে পেটে আপেল গাছ হবে- এই অজানা আশঙ্কা আর ভয়ে নির্ঘুম রাত্রিগুলো যে হারিয়ে গেছে কোথায়??
ভালো ছিলো ভোর পাঁচটায় হুজুরের কাছে না পড়ার উসিলায় পেটে হাত দিয়ে অসুখের ভান করে শুয়ে থাকা, বসার রুমের ঘড়ির কাঁটা এক ঘণ্টা বাড়িয়ে দিয়ে আম্মুকে বলা “ ওহ!! শিট!! ৮টা বাজে?? এখন তো আর গিয়ে স্কুল পাবো না!” ভালো ছিলো ডেস্কের নিচে বই রেখে ক্লাস টেস্টে পাঁচে পাঁচ পাওয়ার দিনগুলি।।
ভালো ছিলো আম্মুর ঝাড়ি খেয়ে চোখ ভর্তি পানি নিয়ে বারান্দার গ্রিল ধরে ‘ কবে বড় হবো’ সেই অজানা প্রতিক্ষা।
ভালো ছিলো ফেলে আসা দিনগুলি।
হয়তো অভাব ছিলো, Luxury জিনিসটা খাঁচায় তোলা স্বপ্ন ছিলো…
তবু রঙ্গিন ছিলো ফেলে আশা দিন, আমার রূপালী শৈশব!