কিছু মানুষ অতীত নিয়ে পড়ে থাকে, অনেক চিন্তা করে দেখলাম আমিও মনে হয় সেই দলে। শীত আসছে, আর সেই সময়ে আমিও শীত আগে কেমন ছিল সেই চিন্তায় পড়ে আছি। সকাল বেলায় বের হতেই হালকা যেই বাতাসটা গায়ে লাগে সেই বাতাসটা কত বছর আগের ঠিক কোন সময়কার কথা মনে করিয়ে দেয় সেই হিসাব খুলে বসি। বলা চলে, নিজের অজান্তেই এসব শুরু হয়।
BMA তে যাবার পর প্রথম সাত দিনে সর্ব মোট তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা ঘুমানোর সৌভাগ্য হয়েছিলো। একজন সিনিয়ারও প্রতি রাতেই পেট ভর্তি আনন্দ নিয়ে মনের সুখে রাত জেগে পানিশমেন্ট দিতেন। সারা রাত ধরে চলতো সেই ভূতুরে কান্ড। রাত তিনটার দিকে তিনি আমাদের ছাড়তেন। আমরা ৩০ থেকে ৪০ মিনিটের জন্য ঘুমানোর সুযোগ পেতাম। ঘড়িতে ভোর চারটা বাজার এটলিস্ট ১০ মিনিট আগেই আমরা উঠে যেতাম সকালের পিটি জয়েন করার প্রিপারেশনের জন্য...
দৈনিক আধা ঘণ্টা ঘুমিয়ে মানুষ বাঁচতে পারে, এই তথ্য BMA তে যাবার পর জানতে পারলাম। পৃথিবীতে অনেক মানুষ আছে, দামী বিছানায়ও যারা ওষুধের পর ওষুধ খেয়ে গড়াগড়ি করেও ঘুমাতে পারে না। আলহামদুলিল্লাহ্, আমাদের এই সমস্যা কখনো হতো না...
আমরা নাস্তার টেবিলে পরোটা ছিঁড়তে ছিঁড়তে ঘুমিয়ে পড়তাম। ক্লাসে ঘুমাতাম। ক্লাসের ফাকে মাঠে কাদার মধ্যে ফ্রন্ট রোল দিতে দিতে ঘুমিয়ে পড়তাম। প্যারেডে মার্চ পাস্টের মাঝ খানে হুট করে মূর্তির মত দাঁড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়তাম।
ঘুমাতাম পরীক্ষার হলে, ১ নং প্রশ্নের উত্তর কথাটা লিখে তার নিচে আন্ডার লাইন করতে করতেই। ঘুমাতাম ড্রেনে , ডিচে পানিসমেন্ট এর জন্য মধ্য রাতে নামিয়ে দিলে...[ফিরে যাই জাহাঙ্গীর কম্পানির কুখ্যাত ড্রেনে]
ঘুমানোর সবচেয়ে আদর্শ জায়গা বোধ হয় ছিলো মসজিদ। রোজার সময় , আতর মেখে ফুলবাবু হয়ে সবাই মসজিদে হাজির। শুরু হলো তারাবির নামাজ। প্রথম রাকাতে সেজদা দিয়ে উঠে চোখের পেরিফেরিয়াল ভিউতে দেখতে পেলাম আমাদের মধ্যে অর্ধেক মুসল্লি সেজাদায় গিয়ে আর উঠে নাই (ঘুমিয়ে পড়েছে)। কারো কোন খবর নাই। সারাদিনের কষ্টের পর সবাই ঘুমে অচেতন। একটু পর দেখলাম ধুপ করে একটা শব্দ হলো। তার পর ধুপ করে আরেকটা শব্দ। আমাদের মধ্যে দুইজন দাঁড়িয়ে ঘুমাতে ঘুমাতে ব্যালেন্স হারিয়ে ধুপ করে মসজিদের ফ্লোরে পড়ে গেছে। তার একটু পড়েই দেখলাম নাক ডাকার গর্জন। পাশের জন মনের সুখে নাক ডাকছে। ইহো জগতের সাথে তার কোন যোগাযোগ আছে বলে মনে হলো না। আমি নামাজে দাড়িয়েই সেজদায় যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। ঘুমে চোখ ফেটে আসছে। সারাদিনের ট্রেনিং এর ক্লান্তি, সিনিয়ারের পানিসমেন্ট, পেটের ক্ষুধা, সব মিলিয়ে চূড়ান্ত হ-য-ব-র-ল অবস্থা...
অতপর একসময় সেজদায় গেলাম। অনেকেই সেজদা থেকে উঠলো। আমি সেজদায় পড়ে রইলাম। সেজদায় ছিলাম প্রায় ৫০ মিনিটের মত। নামাজ শেষ হবার পর স্টাফের চিল্লাচিল্লি তে ঘুম ভাংলো...(আলতাফ স্টাফ)
মসজিদে ঘুমানোর অপরাধে মসজিদ থেকে বের হয়েই আমাদের উপর নাজিল হলো অমানুষিক আজাব আর গজব! নিত্যদিনের আজাব গজবে আমরা অভ্যস্তই ছিলাম। তাই যখন মসজিদ থেকে বের হয়েই স্টাফ বললেন- ‘মকড়া ক্যাডেট! মকরামি করতে আসছেন?? ৫০০ ফ্রন্ট রোল লাগান!’- আমি তখন হাসি মুখে পাঞ্জাবির হাতা ভাজ করতে করতে ফ্রন্ট রোল শুরু করলাম।পেছনে তাকিয়ে শুধু দেখতে পেলাম আমার সাথেই ফ্রন্ট রোল দিয়ে আসছে এক বিশাল মিছিল।সবার মনেই আনন্দ।
ঘাস পোকাকে আমরা শয়তানের ঘোড়া বলতাম, যখন শয়ে শয়ে শয়তানের ঘোড়া আমাদের নাগালে এসে ধরা দিত, ধরে ধরে আমরা স্ফটড্রিংকের ক্যানে ভর্তি করতাম। সময় বুঝে-বন্ধুর মশারীর ভিতর ছেড়ে আনন্দলাভ করতাম।
আসলে ডিফেন্স একাডেমীগুলা এমন, ঐখানে মন খারাপ করে থাকার কোন অপশান নাই। লাইফের অনেক বড় বড় বিপর্যয়েও নিশ্চিন্তে হাসি মুখে আনন্দ ফুর্তি কারাটা আমাদের কাছে নিতান্তই একটা দুধ ভাত ব্যাপার!!লাইফে একটা সময় আমরা অনেক কষ্ট করেছি। তাই এখন আমাদের জীবনে আর কোন দুঃখ কষ্টই নাই! রিজিকের সব দুঃখ কষ্ট বোধ হয় ঐ সময়েই শেষ।। এখন শুধুই আনন্দ। সেই আনন্দলাভে আগুন জ্বেলে হারাধনের বাপ আজকে আমাদের কয়েক হাত দেখে নিচ্ছেন । আহা!! এখনো আমরা প্রতিদিন একটু একটু মানুষ হয়ে ওঠার চেষ্টা করি। ভাদাইম্যা পোলার আসুন সবাই বলিঃ সব্বে সত্তা সুখিতা হন্তু।
“Patriotism turns a zero into a hero, a murderer into a martyr and a sinner into a sain"
(Ref: আলি কুলি লুচ্চার উপন্যাস চিকা মারার ইতিহাস হতে সংগ্রিহীত।)
No comments:
Post a Comment