পিলখানা Tragedy-তে আমার এক কাছের বন্ধু বিদ্রোহীদের দ্বারা নির্যাতিত হয়। তার সহকর্মী ও উর্ধতনের লাশ তাকে কাঁধে তুলতে হয়েছিল। মনের মধ্যে সেই স্মৃতি এখনও খুব জীবন্ত। এতো কষ্টের জীবনের পরে কী তার পরিণতি!?সে আমাকে বলেছিলো-,” মাঝে মধ্যে নিজেদেরকে টিস্যু পেপার বলে মনে হয়। যখন যার ইচ্ছা ব্যবহার করবে, তারপর ব্যবহার শেষে ছুড়ে ফেলে দেবে”। -কী যে কষ্ট করে তা বলে বোঝাতে পারবো না। ভোটার তালিকা করার সময় রাত নেই, দিন নেই নিজেদের পকেট থেকে মোবাইল ফোনের বিল দিয়ে কাজ করে গেছে। সে সময় ওর বোনটার বিয়ে হলো, একদিনের জন্যও ছুটি যোগার করে যেতে পারলো না। Promotion পেয়ে কোনদিন উঁচু পদে যেতে পারবো সেই স্বপ্নও আর দেখে না। তারপরও চোখ-কান বন্ধ করে কাজ করে শুধুমাত্র দেশের প্রতি তাদের অকৃত্রিম ভালবাসা আর Passion-এর কারণে। এগারো বছর ধরে Army -তে আছে। বেতন সর্বসাকুল্যে ত্রিশ হাজার টাকা। ভাইবোন, বাবা কারো কোন প্রয়োজনে কাউকে কোন অর্থ সাহায্য করতে পারেনা। তারা সেটা মেনে নিয়েছে বলেছে টাকাই সব না, সন্মানের সাথে চাকরী করাটাও একটা বড় ব্যাপার। কিন্তু তারপরও যখন পিলখানার মতো ট্রাজিক ঘটনা ঘটে তখন তার বাবা বলেছিলো,এই চাকরী ছেড়ে দে। আমাদের সব মেধাবী, সৎ অফিসারদের যখন নিরস্ত্র অবস্থায় কুকুরের মতো মেরে সুয়ারেজ লাইনে ফেলে দিল, গণকবর দিল, স্ত্রী-সন্তানদের নির্যাতিত করল- তারপরও সব দোষ তাদের….! ?তারা কি আসলেই এতোই খারাপ যে তাদের লাশ ড্রেনে পরে থাকলেও আত্মীয় স্বজন ছাড়া আর কেউ একফোঁটা কষ্ট পায় না?বুদ্ধিজীবিদের কলাম পড়ে আর্মিদের সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা আমাদের গরীব দেশে আর্মি পোষা মানে গরীবের হাতি পোষার মতো। আর্মি অফিসাররা মানুষ হিসেবে খুবই উন্নাসিক আর নিষ্ঠুর প্রকৃতির হয়ে থাকে। অনেকেই এসব প্রশ্নের আসল উত্তর না খুঁজে তাদের মন গড়া চিন্তাভাবনা সব জায়গায় প্রচার করে বেড়ায়। পৃথিবী থেকে সীমান্তের ধারণাটা যদি উঠে যেত তাহলে কিন্তু আর আর্মিদের দরকার পরতোা না। ’দেশ’ নামক আইডিয়ার জন্যই কিন্তু আর্মির অস্তিত্ব। আর্মিরা কিন্তু শুধু দেশের policy implement করে। নিরপেক্ষ বিচারে সব সমগোত্রীয় মানুষদের নিয়ে এক একটা করে দেশ হওয়া উচিত। সেটা না মানলে এসব নিয়ে কোন কথা বলা উচিত না। আর্মিদের যত দোষ সেটা আসলে ’দেশ’ concept টার কারণে। একটা উপন্যাস পড়েছিলাম, নামটা ’All Quiet in Western Front ’। সেখানে লেখক খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছে কিভাবে হঠাৎ করেই একটা দেশের রাষ্ট্র নায়ক ঠিক করলো যুদ্ধ করবে, আর অমনি দুদেশের হাজার হাজার তরুন একে অপরের শত্রু হয়ে গেল। জার্মানীর এক সৈন্য তার সম্পূর্ণ অপরিচিত ফ্রান্সের এক সৈন্যকে হাতের কাছে পেয়ে বিভৎসভাবে খুন করার খেলায় মেতে উঠল। বুদ্ধিজীবিরা মনে করেন আমাদের গরীব দেশের জন্য আর্মি খুব দামী একটা “Commodity”
-হ্যাঁ, দেশের টাকায় তাদের পোষাক আর অস্ত্র কেনা হচ্ছে, ফ্রী বাসা বা মেসে থাকতে পারে, মোটা চালের রেশন পায়। কিছু সুবিধা কি অন্যান্য সরকারী অফিসাররাও পাচ্ছে না? একমাত্র আর্মিতেই দূর্নীতি করে ধরা পরলে সাথে সাথে চাকরি চলে যায়। বাংলাদেশে এক লক্ষেও বেশি আর্মির মধ্যে দূর্নীতিবাজের সংখ্যা দুই Digit-এর কোঠা পেরুবে কি না সে ব্যাপারে সন্দেহ আছে। সেখানে অন্যান্য সরকারী বেসামরিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা কেমন? সেসব জায়গায় দূর্নীতির জন্য কয়জনের চাকরি চলে যায়? হ্যাঁ, মিশনে গেলে কিছু টাকা কমাতে পারে। কিন্তু সেই মিশনের জীবন আরামের কিছু না। যে কোন মুহূর্তে মৃত্যু ঘটতে পারে। তারপরও পরিবারের স্বচ্ছলতার জন্য মিশনে যায়। দেশের জন্য সুনাম আর Remittance দুটোই নিয়ে আসে। দামী COMMODITY , SHOW PIECE কত নামেই আর্মিদের ডাকা হয়। কিন্তু এই COMMODITY দেশের প্রয়োজনে যে কোন কাজ করতে প্রস্তুত। হাল চাষ, গবাদি পালন, সব্জী চাষ, ত্রান বিতরন, দেশকে সংঘাতের হাত থেকে রক্ষা করা,দোকানদারী, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রন, পানি বিতরন, উদ্ধার অভিযান, বন্যা, খরা, সিডর, গার্মেন্টস এ আগুন নিভানো, আইন শৃঙ্গখলা রক্ষা করা এই রকম আরো কত কি হবে -তারপরও সবাই বলবে আর্মি জনগণের টাকায় ফুলে ফেঁপে উঠছে।। আমাদের মতো সাধারণ জনগণ পেপারে বুদ্ধিজীবিদের কলাম পড়ে আর্মি সম্পর্কে একটু আধটু ধারণা পাই। আর্মি আর সিভিল সোসাইটির মধ্যে এতোটা দ্বন্ধ জিইয়ে রাখা হয় কেন সেটা বুঝতে পারি না।আর্মি তো এই দেশেরই সিভিল সমাজের সন্তান এটা অনেকেই বুঝতে পারেন না। তাই যখন মানবাধিকারের কথা বলা হয় তখন আর্মিকে এর বাইরে রাখা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন একজন ছাত্রীকে কোন এক ক্যাডার লাঞ্চিত করে তখন বুদ্ধিজীবিরা কোন শোরগোল করেন না। তাদের শোরগোল শোনা যাবে যখন একজন সৈনিকের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন ছাত্রের গন্ডগোল হয়। সিভিলিয়ানদের সাথে ব্যবহারের ব্যাপারে আর্মি আইন খুবই কঠিন। ঐ সৈনিকের চাকরী সাথে সাথেই চলে যায়। অথচ তার উপর কি না পরিবারের আর দশজন মানুষ নির্ভর করছিলো। আর বুদ্ধিজীবিদের কথা বলছেন, খোজ নিয়ে দেখেন এরা অনেকেই বয়স থাকা সত্ত্বেও একাত্তুরে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেনি।
অথচ তখন বাঙ্গালি সব আর্মি নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ব্যারাক থেকে বের হয়ে এসেছিলো। গণতন্ত্র সংহত রাখার কথা চিন্তা করলে তখনও তো আর্মিদের সেই ঝুঁকি নেওয়াটা যুক্তিযুক্ত ছিল না। বাংলাদেশে আর্মির ইতিহাস একেবারেই অন্যরকম। আর একটা কথা বলে রাখছি নতুন প্রজন্মের আর্মিরা কিন্তু অনেক বেশি মাত্রায় দেশপ্রেমিক। পাকিস্থানফেরত বা মুক্তিযোদ্ধা আর্মি এই বিরোধটা না থাকাতে তারা অনেক বেশি একাত্ম।