দীনবন্ধু মিত্র যখন নীলচাষীদের কান্নার ধ্বণিকে শব্দের সৌকর্যে সাজালেন কালোত্তীর্ণ সাহিত্য উপস্থাপনায় তখন রাজা রামমোহন বললেন “নীলচাষের জমির নিকটবর্তী অঞ্চলের অধিবাসীদের জীবনযাত্রার মান অন্যান্য অঞ্চলের জীবনযাত্রার মানের তুলনায় উন্নততর। নীলকরদের দ্বারা হয়তো সামান্য কিছু ক্ষতি সাধিত হতে পারে, ……. নীলকর সাহেবগণ এদেশীয় সাধারণ মানুষের অকল্যাণের তুলনায় কল্যাণই করেছেন বেশী”। দ্বারকানাথ বাবু বললেন, “নীলচাষ এদেশের জনসাধারণের পক্ষে সবিশেষ ফলপ্রসূ হয়েছে। জমিদারগণের সমৃদ্ধি ও ঐশ্বর্য বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং কৃষকদের বৈষয়িক উন্নতি সাধিত হয়েছে।” বৃটিশ শাসনের কল্যাণে এভাবে পশ্চিমা সুবাতাসে যখন আধুনিক ভারত জন্ম নিচ্ছিল গ্রাম্য কৃষকদের জীবন-শ্রম-ঘামের বিনিময়ে। তখন বঞ্চিত, বিধ্বস্ত, লুণ্ঠিত কৃষকরা আধুনিকতার মোহমগ্ন লাভবান বাবু আর রাজাদের পেছন থেকে সরে দাঁড়াবার মতোন একটা অবস্থায় কোণঠাসা হতে থাকলো।
সংগ্রাম আর লড়াইয়ের পেছনে চিরকালীন উৎস শ্রেণীস্বার্থ তাই অচিরেই খুঁজে নিলো তাদের নব্য নেতৃত্বকে। সংখ্যাগুরু মধ্যবিত্ত যখন স্বার্থের টানাপড়েনে হুশ জ্ঞানে সম্বিত পেলো, সরব হলো – তখন অচিরেই নেতৃত্ব সমর্পিত হতে চললো সংখ্যার বেদীতে। রাজাবাবুদের পেছন থেকে সরে মানুষ সারিবদ্ধ হতে থাকলো সোচ্চার মধ্যবিত্তের পেছনে। কৃষক বিদ্রোহ আর সচেতন মানুষের স্রোত সাধারণের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করলো শিক্ষিত বাবুদের। অসহায়, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত, চাষী, মজুর যখন বুঝলো বাবুদের শোষণের খড়গ হাত থেকে নিস্তার নেই, তার দুঃখ যন্ত্রণার গান শোনার জন্যেও কেউ অপেক্ষায় নেই, আকুতি জানাবার জন্য পাথরের দেবতা ছাড়া আর কেউ নেই, সমর্পণের স্রষ্টা ছাড়া বিকল্প নেই, তখন ধর্ম আর ধর্মের আলখাল্লায় মোড়ানো অন্ধবিশ্বাসে তাদের আস্থার শিকড় প্রোথিত হতে শুরু করলো।
No comments:
Post a Comment