সাতেও নাই, পাঁচেও নাই

সাতেও নাই, পাঁচেও নাই। আমি একা একা থাকতেই ভালবাসি- "ভালবাসি" কথাটা হয়ত ঠিক না... একা থাকতে থাকতে এমন হয়ে গ্যাছে। আমি সহজে কারো সাথে মিশতে পারি না।হয় বরাবর কথা বলি... নয়তো একেবারেই বলি না।ছোটবেলা থেকেই কিছুটা অন্তর্মুখী স্বভাবের হওয়ার কারনে আমার বন্ধু-বান্ধব তেমন কেউ ছিলোনা। আমার ভাইবোনেরাও (কাজিনরা) আমাকে খুব একটা পাত্তা দিতোনা। অবশ্য এই একাকীত্ব বা ভাইবোনের (কাজিনদের) পাত্তা না দেবার বিষয়টি কখনই আমার মনোকষ্টের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়নি। বরং আমি খুশিই হতাম এ কারনে যে কেউ আমাকে ডিস্টার্ব করছেনা! আমি আসলেই একটু 'ভোদাই' গোছের?বুঝে সমঝে চতুরতা নিয়ে চলতে পারি না, বলার কাজ বলে ফেলি, করার কাজ করে ফেলি (আমি একটু ঠোটকাটা তো, তাই প্রিটেন্ড করতে পারিনা)।লক্ষ্য করলাম একটা প্যাটার্ন আছে।।লক্ষ্য করলাম একটা প্যাটার্ন আছে।বেশির ভাগ সময়েই দেখেছি মুখ না খুললে বা কাজটা না করলে, লাভের খাতা ভারী থাকতো।যাই হোক জীবনে "বোকা না সাহসী" এই চিন্তা নিয়ে অনেক ভুগলাম। আমি শিওর ছিলাম আমি সাহসী না, অতএব, বাকি যেই সম্ভবনা সেই ত্রুটি থেকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করলাম। এক সময় বুঝলাম, নিজের কাছে কেমন যেনো মেকি হয়ে যাচ্ছি। ভাবলাম, ধ্যাত, আমি আমিই। আমি বোকা না সাহসী এটার উত্তর আমার দরকার নেই।শুভাকাঙ্ক্ষী সংখ্যা দিনদিন কমে যাচ্ছে।এককালে মনে হইত আমার শরীরে যতগুলা চুল আছে গুনে শেষ করা যাবেকিন্তু আমার শুভাকাঙ্ক্ষীগুনে শেষ করা যাবে না। এখন আর তেমন মনে হয় না। তাল মেলাতে না পেরে পিছিয়ে পড়ছি,একলা হয়ে পড়ছি। আত্মার আত্মীয় বান্ধবকূলের সবাই কর্পোরেট, মিলিটারি ইত্যাদি হয়ে এখন প্রফেশনাল। কেউ কেউ বাড়ী গাড়ি ইত্যাদি নিয়ে প্ল্যান করা শুরু করেছে।আমি পেছনেই আছি,একাকীই আছি,এখনো I ব্যস্ত সবাই।ব্যস্ততাইনিয়ম।তবু ফাক ফোকর পেলেই ব্যস্ত ছেলেরা গেট টুগেদার পার্টি থ্রো করে।যেতে পারি না।খুব ইচ্ছে থাকে,কপাল থাকে না।টাইমিং হয় না (ভাবখানা এমন যেন আমিই সবচেয়েব্যস্ত)।রাজধানীবহির্ভূত হয়ে আরো অসুবিধা, দু একদিন সময় পেলে একটু হাফ ছেড়ে নিই,কোথাওযেতে ইচ্ছে করে না।ওরাও মন খারাপ করে,আমিও মন খারাপ করে বসে থাকি। সবাই সিরিয়াসএখন।এখানেও যথারীতি নিয়মের কোন ব্যত্যয় নেই,আমি একাই,পুরনো,ওল্ডস্কুল ফাঁকিবাজ।পাশ করা মাত্রই দ্রুতগতি ক্যারিয়ারের হাতছানি আছে কারো।যাদের ক্যারিয়ার হইছে তাদের সামনে মুখ দেখানো নিষিদ্ধ একটা ভাব চলে আসে বলা যায়।থাকি সারাদিনইডিয়টদের সাথে, আবার বলদগুলার জন্য মায়াই লাগে। আগে নিয়ম ভাঙাই ছিল ছেলেদের ফ্যাশন,এখন আরেকরকম হাস্যকর ফ্যাশন।আরেকপার্টি হলো তারা বাসায় থাকে।আগে একসাথে কত গুজুরগুজুর !এখন কালেভদ্রে আসে, খুব বিব্রত।কোন কথা খুঁজে পায় না।?!অস্বস্তিকর নীরবতার দুর্ভেদ্য দেয়াল পার হয়ে কোন অনুভূতি আনাগোনা করে না!উহারা বাসায় থাকে ,নানাবিধ কর্মকান্ডে কর্মব্যস্ত থাকতে হয় সারাদিন।একটু ফুরসুৎ পেলে সহযোদ্ধা সিরিয়াসদের সংসর্গে কয়েকঘন্টা কাটিয়ে আসলে মনটা ফুরফুরা লাগে! কিন্তু পুরনো কাসুন্দি ঘাটার সময় কোথা?! বিজ্ঞানীরা বলেছেন অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ!!!
আলগোছে চুপিচুপি কতজনের ‘সহযোদ্ধা ‘ লিস্ট থেকে যে ঝরে পরেছি!!!! আফসোস!!!
প্রতিটি নি:সঙ্গ মুহূর্তই পীড়াদায়ক।তাই প্রতিমুহূর্ত একাকীত্ব থেকে পালিয়ে থাকার প্রয়োজনে নিরন্তর ব্যস্ততার আশ্রয় খুঁজি। আমার খোঁজাখুঁজিতে যাতে ডিস্টার্ব না হয় তাই বোধহয় শুভাকাঙ্ক্ষীকূলআমাকে প্রয়োজনীয় স্পেস দিয়ে নিরাপদ দূরত্বে সরে গেছে! অথচ নির্বোধ আমি তাদের ভুল বুঝে নির্লজ্জ অভিযোগ করে যাচ্ছি! প্যাথেটিক!!!!

জীবন তো তার মত বহে যায়, আমরাই শুধু সেটাকে সুখ বা দুঃখ নামে পার্থক্য করি,বেঁচে থাকা দারুন একটা ব্যাপার ।কিন্তু কয়জন বেঁচে থাকে। আমি বেঁচে থাকার চেষ্টা করি।সময় মূল্যবান ।জীবন তার চেয়েও অনেক বেশী মূল্যবান।আর সম্ভাবনাময়। বিশ্বদ্যিালয়ের পাঠ চুকিয়ে নিরস চাকুরীজীবন। সামনে আরও নিরস ভবিষ্যৎ। নিরস জীবন সরসভাবে কাটানোর প্রচেষ্টায় আমি একজন অতি সাধারন মানুষ । আমি যা আমি তাই ই । শয়তানও নই কিম্বা ফেরেশতা ।জঘন্য রকমের বাস্তববাদী, সাদামাটা । কাজের কাজ তেমন কিছু পারি না...