কোনো এক ককটেলীয় কারণে রাজনৈতিক দলগুলো ‘আলাপ’ করতে ভালোবাসলেও ‘সংলাপ’ করতে চায় না। অথচ গণতন্ত্রের জন্য শারীরিক কসরতের চেয়ে চোয়ালের ব্যায়াম বেশি প্রয়োজন। ডেমোক্রেসির মুকুট ‘সংলাপ’ ছাড়াই আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নাকি এগিয়ে চলেছে-এটি পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য! শরৎবাবু বেঁচে থাকলে হয়তো বলতেন, ‘অতিকায় হস্তী লোপ পাইয়াছে, কিন্তু সংলাপ-সমঝোতা ছাড়াই গণতন্ত্র টিকিয়া আছে।’ সত্যিই সেলুকাস, কী টেকসই এই গণতন্ত্র!
ছেলেবেলা থেকেই শুনে আসছি, সবাই সংলাপ চায়। কিন্তু কেউ কথা রাখেনি। সংলাপের দেখা আর মেলেনি। পেয়েছি সংঘাতের সন্ধান-মানুষ মরছে, গাড়ি পুড়ছে! সংলাপের অভাবে অ্যাক্টিভিস্টরাহাত-পায়ের ভাষায় মনের ভাব প্রকাশের সুযোগ পেয়েছে। রেজাল্ট হিসেবে পাবলিকের লাশ পড়ছে। এসব অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গেলেও পুরস্কার হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে নিরাপত্তাহীনতারগ্যারান্টি! তাই আবালবৃদ্ধবণিতারকাছে আপাদমস্তক গণতন্ত্রই আজ প্রশ্নবিদ্ধ! বিদ্রোহী কবি বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই লিখতেন,
‘ভোর হলো দোর খোলো
খোকনমণি ওঠো রে,
মারছে যারা আমাদের
দিচ্ছি তাদের ভোটও রে!’
সবাই সংলাপের কথা বললেও শর্তের গর্তে পড়ে সংলাপ বাবাজি মুহুর্মুহু শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করছে! সংলাপ ইঞ্জিনিয়ারিংয়েরখপ্পড়ে পড়ে বাংলার আকাশে আজ দুর্যোগের ঘনঘটা। কে আমাদের আশা দেবে, কে আমাদের বারোটা বাজার হাতথেকে বাঁচার ভরসা দেবে? তবে কি ‘পৃথিবীতে সংলাপ বলে কিছু নেই’? জনগণের জীবন এখন ‘Life of Pi’-এর মতো!
সংলাপহীন সংঘাতময় পৃথিবীতে বেঁচে থাকাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আফসোস, এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য আমাদের শরীরে এক্সট্রা কোনো ফিচার নেই। অথচ বাকি সব জীবেরই আত্মরক্ষার কোনো না কোনো উপায় আছে। শেয়াল পণ্ডিত শত্রুকেখেয়াল করামাত্র পয়ঃ স্প্রে করতে করতে দৌড়ে পালায়! নিজেকে বাঁচানোর জন্য কোনো প্রাণী রং পাল্টায়, কেউবা দলবেঁধে চলাফেরা করে। প্রাণী ও উদ্ভিদদেহে আছে কাঁটা, লেজ, শিং, শুঁড়-নানা কনফিগারেশনের কতশত স্ট্রাকচার! অথচ মানুষ চাইলেও বিপদ দেখে পাখির মতো উড়ে পালিয়ে যেতে পারে না; ম্যাজিকের সাহায্যে নিজেকে গায়েব করে ফেলতে পারে না। বরং ক্ষমতালোভীরা পাখির মতো মানুষ মারে; চাইলে গুমও করে ফেলতে পারে। সুপারম্যান, স্পাইডারম্যান কেবল কল্পনাতেই সম্ভব; বাস্তবে আমরা সবাই হিউম্যান।
জানি, সৃষ্টির বেদনা আছে। এও জানি, ‘যাহা চাই তাহা ভুল করে চাই’! তবুও চাই, সংলাপের মাধ্যমেএগিয়ে চলুক গণতন্ত্রের ধারা। রাজনীতিবিদদের কাছে অনুরোধ, যে সংলাপ দলীয় কার্যালয় থেকে এসে জাতীয় জীবনে অমর হয়ে রবে, তেমনি একটি সংলাপ আমাদের উপহার দিন প্লিজ। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে যেন বলতে পারি, ‘সংলাপ’ একবার এসেছিল নীরবে। আসুন, ক্ষমতায় না, মমতায় বাঁচি!আমরা জানি যে আপনারাও জানেন, ক্ষমতার চেয়ে মমতা লক্ষ-কোটিগুণ বেশি শক্তিশালী!
No comments:
Post a Comment