গল্পটা একটু অন্যরকম হতে পারত।
হ্যা। একটু অন্যরকম।
জিতু বেশ কিছুক্ষণ ধরে বসে আছে করিডোরের বেঞ্চে।এমনিতে অনেক অশান্ত প্রকৃতির। কিন্তু আজ ওর অপেক্ষা করতে একটুও খারাপ লাগছে না। বরং বুকে একরাশ আশা। অনেক স্বপ্ন। স্টেডিয়ামে প্রাকটিস গ্রাউন্ডের পাশে বসে আছে। দূর থেকে দেখছে তার সেই স্বপ্নের মানুষ গুলোকে প্রাকটিস করতে। ও এসেছে বোলিং ট্রায়াল দিতে। ছোটবেলা থেকেই খুব ভাল ক্রিকেট খেলে। পাড়ার ক্রিকেটে ও ছিল এক ভয়ংকর নাম। স্কুল টীমের ক্যাপ্টেন হয়ে ওর স্কুল কে চ্যাম্পিয়ন ও করেছে। ওই টুর্নামেন্টে ও ছিল হাইয়েস্ট উইকেট টেকার। স্কুল জীবন পেরিয়ে কলেজে ভর্তি হল।ওর প্রতিভা আরো ছড়িয়ে পড়ল। একটা ক্লাব ওকে টীমে ভেড়াল। লীগে চ্যাম্পিয়ন হল সে ক্লাব। দ্বিতীয় সারি থেকে উঠে এল প্রথম সারিতে।ক্লাবের কোচ ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন ওর প্রতিভা। তাই ঠিক করলেন যে ভাবেই হোক ওকে আরো এগিয়ে নিতেই হবে। পাওনিয়ার লীগের টীমের কোচের সাথে কথা বলে ওকে নিয়ে এলেন ট্রায়াল দিতে । জিতু অপেক্ষায় আছে। ওর ডাক আসবে। দূর থেকে কে যেন ফাইল হাতে এগিয়ে আসছে। হয়তো ওকে ডাকতেই। জিতুর মুখে হাত। অনেক স্বপ্ন। কিন্তু………
এই জিতু ওঠ। ওঠ। আর কতোক্ষণ ঘুমাবি? বাসের সময় হয়ে যাচ্ছে তো। মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙে জিতুর।হুট করে বসে পড়ে। কি হচ্ছে বুঝতে একটু সময় নেয়। মা চলে যায়। আবারো বলে “তাড়াতাড়ি কর।সময় হয়ে যাচ্ছে।”
আজ জিতুর মিলিটারি একাডেমীতে যোগদান করার দিন। ক্রিকেট খেলে ভালই যাচ্ছিল জিতুর দিনগুলো । পড়াশুনায় অতো মন ছিল না। হয়ত ভাল কিছুই করতো। কিন্তু হঠাৎ ওর বাবা স্ট্রোক করে। খুব বেশি খারাপ কিছু না ঘটলেও ডাক্তার বলে উনি যেন কোন টেনশনে না থাকেন। আর কাজও আগের মত অতো বেশি করতে পারবেন না। আগের চেয়ে অনেক রিলাক্সড লাইফ কাটাতে হবে। পরিবারের বড় ছেলে জিতু । বাবা ক্রিকেট খেলাটা অত ভাল চোখে দেখতো না। বারবার পড়ায় মন দিতে বলতো। কিন্তু জিতু শুনতো না। বাবার ইচ্ছা ছিল এইচএসসি পাশ করে জিতু আর্মিতে যোগ দেবে।ও কখনো ব্যাপারটা মেনে নিতে পারেনি। কিন্তু। কিন্তু এবার আর কিছু করার নেই। বাবার স্ট্রোকটা হয় ওর ফার্স্ট ইয়ারের শেষের দিকেই। সব কিছু জেনে শুনে বুঝে জিতুকে পড়াশুনায় সিরিয়াস হতে হয়। ক্রিকেট ছেড়ে দেয়। এইচএসসির পর আইএসএসবি দিয়ে টিকে যায়। কাল ওর জয়েনিং ডে। আজ বাসে রওনা দিবে। কিন্তু……..
গল্পটা একটু অন্যরকম হতে পারত। দূর থেকে এগিয়ে আসা আগন্তুক জিতুর সামনে এসে দাঁড়ায়। ফাইলে কিছু একটা দেখে জিজ্ঞাসা করে “তুমি কি জিতু ?”
নার্ভাস ভঙ্গিতে মাথা নাড়ে জিতু ।
-আমার সাথে এসো। এবার তোমার পালা।
বাধ্য ছেলের মত এগিয়ে যায় জিতু । নেটের কাছে এসে থামে। একজন, সম্ভবত কোচ হাতে বল ছুড়ে দেয়। বলে “শুরু কর।”
একটু এ পাশ ও পাশ তাকিয়ে নেয় জিতু ।দূরে দাঁড়িয়ে আছে তার সেই ক্লাবের কোচ। চেহারা ঠিক দেখা যাচ্ছে না। তবে যেন বলতে চাচ্ছেন “জিতু, তুমি পারবে।”
একটা নিঃশ্বাস নিয়ে রান আপ নেয় জিতু। প্রথম বলটা ইনসুয়িং করে মিডল স্ট্যাম্প। উজ্জ্বল হয়ে ওঠে কোচের মুখ। জিতুর চোখে বিস্ময়। পরের বলটা শর্ট লেন্থে স্ট্যাম্পের উপর দিয়ে যায়। এরকম এক্সট্রা বাউন্সে কোচের চোখে বিস্ময়। এক ওভারের প্রতিটা বলেই কোচকে তাক লাগিয়ে দেয় জিতু। ওভার শেষে কোচ পিঠ চাপড়ে বলে ” ওয়েল ডান মাই বয়।”
কিন্তু………
-কিরে এখনও উঠিস নি??
মায়ের ডাকে আবারো ঘুম ভাঙে জিতুর। এবার আর চোখে কোন বিস্ময় নেই।সোজা উঠে বাথরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে। ব্রাশ করার সময় আয়নার দিকে তাকায়। কেমন জানি লাগছে ওর নিজেকে। কেমন অজানা। কেমন অচেনা। কিন্তু………
কিন্তু গল্পটা একটু অন্যরকম হতেও পারত।।
No comments:
Post a Comment